'নাজাসাত' আরবি শব্দ। এর অর্থ অপবিত্রতা। এটি তাহারাত বা পবিত্রতার বিপরীত। শরীর থেকে যেসব জিনিস বের হওয়ার কারণে শরীর অপবিত্র হয়ে যায় অথবা যে সব দ্রব্য কোনো পবিত্র বস্তুতে লাগলে তা অপবিত্র হয়ে যায়, তাকে নাজাসাত বা অপবিত্রতা বলা হয়। যেমন: মল-মূত্র, রক্ত ইত্যাদি। নাজাসাতের কারণে শরীর, কাপড় ও ব্যবহারিক জিনিসপত্র অপবিত্র হয়ে যায়। এ অবস্থায় তা পবিত্র করা একান্ত জরুরি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَأَطَهَّرُوا
অর্থ: আর তোমরা যদি অপবিত্র হয়ে যাও তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬)
নাজাসাত বা অপবিত্রতার প্রকারভেদ
নাজাসাত দুই প্রকার:
১. নাজাসাতে হাকিকি বা প্রকৃত অপবিত্রতা
২. নাজাসাতে হুকমি বা অপ্রকৃত অপবিত্রতা
নাজাসাতে হাকিকি: নাজাসাতে হাকিকি বলতে ঐ সকল অপবিত্র বস্তুকে বোঝায় যেগুলো প্রকৃতিগতভাবেই অপবিত্র এবং ইসলামি শরিয়ত সেগুলোকে অপবিত্র ঘোষণা করে। ঐ সকল অপবিত্র বস্তুকে মানুষ অপছন্দ করে। যেমন: প্রস্রাব, পায়খানা, রক্ত ইত্যাদি। ইসলাম এসব থেকে শরীরকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
নাজাসাতে হুকমি: নাজাসাতে হুকমি হচ্ছে ঐ সকল অপবিত্রতা যা দেখা যায় না কিন্তু ইসলামি বিধানে তা নাজাস- াত বা অপবিত্র বলে গণ্য। যেমন-ওযু ভঙ্গ হওয়া, গোসলের প্রয়োজন হওয়া ইত্যাদি। উলেখ্য যে, উভয় প্রকার অপবিত্রতা থেকে শরীর পবিত্র রাখা একান্ত প্রয়োজন।
অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের উপায়সমূহ
আলাহ তায়ালা নিজে পবিত্র, তাই তিনি পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যক্তি ও পবিত্র বস্তুকে পছন্দ করেন। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জনের উপায়গুলো হলো-
১. ওযু: শরীর পবিত্র করার নিয়তে পাক-পবিত্র পানি দিয়ে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী মুখমন্ডল, দুই হাত (কনুই সহ) ও দুই পা (টাখনু সহ) ধৌত করা এবং মাথা মাস্হ করার নাম ওযু। যে পানি দিয়ে ওযু করা হবে তা অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। যেমন-নদী, খাল, পুকুর, কূপ, ঝরনা, নলকূপ বা শহরে সরবরাহ করা পানি।
২. গোসল: পবিত্র পানি দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে পুরো শরীর ধৌত করাকে গোসল বলে। গোসলের মাধ্যমে পুরো শরীর পবিত্র হয়ে যায়।
৩. তায়াম্মুম: পানি পাওয়া না গেলে অথবা অসুস্থ অবস্থায় রোগী পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু দ্বারা মুখমন্ডল ও হাত মাস্হ করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করাকে তায়াম্মুম বলে।
ইসলাম মনের পবিত্রতার ওপর খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। খ্যাতিমান ইসলামি পন্ডিতগণ মনের কতিপয় মৌলিক রোগ চিহ্নিত করেছেন। তা হলো লোভ, উচ্চাশা, রাগ, মিথ্যা বলা, গিবত (পরনিন্দা), কার্পণ্য, অহংকার, রিয়া (লোক দেখানো), হাসাদ (হিংসা)। এ পাপগুলো থেকে বেঁচে থাকলে মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া ইসলামের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাবগুলো যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে মনের পবিত্রতা অর্জন করা যায়। কোনো মুমিন যদি ইবাদাতের পাশাপাশি হালাল খাদ্য গ্রহণ করেন, হারাম থেকে বেঁচে থাকেন, কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং সদা আল্লাহর যিকির (স্মরণ) করেন তবে তাঁর অন্তর পবিত্র থাকবে। এবার আমরা পবিত্র থাকার লক্ষ্যে ওযু, গোসল এবং তায়াম্মুমের নিয়মগুলো জেনে নেবো।
| কাজ: শিক্ষার্থীরা চার-পাঁচজনের দলে বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক দল প্রকৃত অপ্রবিত্রতার ও অপ্রকৃত অপবিত্রতার একটি তালিকা ছক আকারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। | 
Read more